BanglaData.Blogspot.Com

BanglaData.Blogspot.Com

সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৫

আর নয় বিষণ্নতা

আর নয় বিষণ্নতা

সব দিন মানুষের এক রকম যায় না। ভাল দিন যায় খারাপ দিন আসে, সুখ যায় দুঃখ আসে। দুঃখ এসে এক সময় চলেও যায়, এটাই নিয়ম। এটাই জীবন। কিন্তু যদি দুঃখবোধ দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ধরে আপনাকে কষ্ট দিতে থাকে বা দুঃখবোধের কারণে আপনার ব্যক্তিগত ও দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয়, তাহলে এ দুঃখবোধ স্বাভাবিক নয়। বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত হলে এমনটা হয়।
বিষণ্নতা এমন একটি মানসিক অসুস্থতা যা ব্যক্তির মন এবং দেহ দুটোকেই আক্রমণ করে। ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের সংস্পর্শ থেকে গুটিয়ে নেয়। কাজে দেখা দেয় উৎসাহের অভাব। শরীরে ব্যথা-বেদনা, অস্বস্তি আর ঘুমের সমস্যা ব্যক্তির জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।
উপসর্গঃ
০ অস্বাভাবিক দুঃখবোধ। ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে এ দুঃখবোধে আক্রান্ত থাকে। আনন্দের জিনিসগুলোও তাকে আর আগের মতো আনন্দ দিতে পারে না।
০ ব্যক্তিগত কাজে আগ্রহ উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা বোধ করে।
০ খাওয়া-দাওয়া কমে যায় বা অতিরিক্ত বেড়ে যায়।
০ ঘুমে সমস্যা দেখা দেয়। কেউ কেউ অতিরিক্ত ঘুমায়। কারও কারও ঘুম কম হয়, বিশেষ করে ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে যায়।
০ শরীরে শক্তি পায় না। সাধারণ কাজকর্ম করতে প্রচণ্ড কষ্টবোধ হয়। ০ কোন কারণ ছাড়াই সব বিষয়ে দুশ্চিন্তা বা হতাশা বোধ করে।
০ মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করে।
০ কোনও কিছু পরিষ্কারভাবে ভাবতে পারে না। মনোযোগী হতে অসুবিধা বোধ করে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।
০ আত্মহত্যার ইচ্ছা বা চেষ্টা করে।
০ যৌন বিষয়ে আগ্রহ কমে যায়।
০ অকারণে অপরাধবোধে ভোগে।
০ সামান্য শারীরিক ব্যথা-বেদনায় অস্থির হয়ে ওঠে।
করণীয়
০ মুখ বন্ধ করে থাকবেন না, কোন ঘটনায় আপনি ব্যথিত হলে তা আপনজনকে বলুন। অর্থাৎ আপনার অনুভূতি ব্যক্ত করুন।
০ যতটা পারেন কাজ করুন। বাইরে বেড়াতে যান। ব্যায়াম করুন। অন্তত প্রতিদিন আধ ঘন্টা হাঁটুন।
০ দুঃখবোধের চিন্তায় ব্যস্ত না থেকে অন্য কাজে মনকে ব্যস্ত রাখুন, বই পড় ন, গান শুনুন, গল্প করুন। এসব কাজ প্রথম প্রথম করতে হয়তো ভালো লাগবে না। শুরু করলে ধীরে ধীরে ভালো লাগবে।
০ পুষ্টিকর সুষম খাদ্য খান।
০ প্রয়োজনে মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সাধারণত সাইকোথেরাপি ও ওষুধের মাধ্যমে বিষণ্নতার চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে আপনার জন্য উপযোগী চিকিৎসা ব্যবস্থা নির্ধারণ করুন এবং তা মেনে চলুন। গভীর বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অনেক সময় ই•সি•টি বা বৈদ্যুতিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হলে এ চিকিৎসা নিতে দ্বিধা করবেন না।
মনে রাখবেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষণ্নতা নিরাময়যোগ্য। সাধারণত ৪-৬ সপ্তাহের চিকিৎসায় ব্যক্তি বিষণ্নতা কাটিয়ে ওঠে। উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে ব্যক্তি আগের মত ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও কর্ম জীবনকে উপভোগ করতে পারেন।
***********************
ডাঃ জিল্লুর কামাল
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ
চেম্বারঃ সুখীমন, ১৭/৮ পরিবাগ, সোনারগাঁও রোড।
দৈনিক ইত্তেফাক, ০২ আগষ্ট ২০০৮

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন