BanglaData.Blogspot.Com

BanglaData.Blogspot.Com

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০১৫

বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করার নিয়ম

বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করার ধারাবাহিক নিয়ম
বিভিন্ন প্রয়োজনে দরকার পাসপোর্ট। সময়মতো নিজের পাসপোর্টটি করে রাখুন। পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া নিয়ে সবার মধ্যেই এক ধরনের ভীতি কাজ করে। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিকভাবে মনে রাখলে পাসপোর্ট করা মোটেও কঠিন কোনো কাজ নয়। লিখেছেন- সাইফ হাসনাত
নতুন পাসপোর্ট করে নিন
নতুন পাসপোর্ট করার জন্য প্রথমেই আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে পাসপোর্ট তৈরির আবেদন ফরম। এটি পাওয়া যাবে আগারগাঁওস্থ পাসপোর্ট অফিসে। অথবা পাওয়া যাবে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও। তবে ফরমটি সংগ্রহ ও পূরণ করা সহজ হবে অনলাইন-পদ্ধতিতে।
www.passport.gov.bd ঠিকানায় মিলবে অনলাইনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ফরম পূরণ পদ্ধতি। ফরম পূরণের আগেই যদি পাসপোর্টের ফি জমা দিয়ে মানি রিসিট সংগ্রহ করে নেয়া যায়, তবে কাজ সহজ হয়ে যাবে। কারণ পূরণকৃত ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হবে মানি রিসিটও। পাসপোর্টের জন্য টাকা গ্রহণ করা হয় সোনালী ব্যাংকে। জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট পেতে জমা দিতে হবে ৬০০০ টাকা। আর সাধারণ সময়ে পাসপোর্ট পেতে লাগবে ৩০০০ টাকা।
ফরম পূরণের সময় নিজের নামের বানান যাতে শিক্ষা সনদের অনুরূপ হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে পিতা-মাতার নামও যাতে নির্ভুল হয়, লক্ষ্য রাখতে হবে সেদিকেও। মনে রাখতে হবে, একবার ভুল হয়ে গেলে তা শোধরাতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়।
অনলাইনে ফরম পূরণের সময় নিয়মিত ব্যবহার করেন এমন ই- মেইল ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিন। ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার আগে আবার যাচাই করে নিন। অনলাইনের ক্ষেত্রে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার পর একটি ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দেয়া হবে, তা সংরক্ষণ করুন। সেই সঙ্গে সংরক্ষণ করুন মেইলে পাঠিয়ে দেয়া পূরণকৃত ফরমের পিডিএফ কপিও।
এর পর মেইলে আসা ফরমের কপিটি রঙিন প্রিন্ট করে নিন। তারপর চার কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম নিবন্ধন সনদ/ শিক্ষা সনদের ফটোকপি প্রথম শ্রেণীর কোনো পরিচিত কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়িত করে নিন। ফরমের নির্দিষ্ট অংশে আঠা দিয়ে ছবি সেঁটে দিন। ফরমের সঙ্গে যুক্ত করুন সত্যায়িত করা অন্য কাগজপত্র এবং টাকা জমা দেয়ার রশিদ। আপনার ফরমটি এখন পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
এবার এক দিন ফরমাল পোশাকে সকাল ৯টার মধ্যেই পাসপোর্ট অফিসে চলে যান। সম্পূর্ণ পূরণকৃত ফরমটি পাসপোর্ট অফিসের নির্দিষ্ট ডেস্কে জমা দিন। এক্ষেত্রে কোনো দালালের খপ্পরে পা দেবেন না। সরাসরি মূল অফিসের সাহায্য নিন। প্রয়োজনে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তা নিন।
ফরম জমা দেয়ার সময় আপনাকে একটি রিসিট দেয়া হবে, তাতে একটি সিরিয়াল নাম্বার থাকবে। সেই সিরিয়াল অনুযায়ী আপনার ডাক পড়বে ছবি তোলার জন্য। ছবি তোলার পাশাপাশি রাখা হবে আপনার দুই হাতের ফিঙ্গার প্রিন্ট। ইলেক্ট্রিক মাধ্যমে রাখা হবে আপনার স্বাক্ষরও। এ ক্ষেত্রে ফরমে দেয়া স্বাক্ষরটিই দিন। ফরম জমা দেয়ার পাশাপাশি ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর আপনাকে একটি রিসিট দেয়া হবে। সেটি যত্নসহকারে সংগ্রহ করুন। পাসপোর্ট তোলার সময় সেটির দরকার হবে। আপনার কাজ শেষ!
এবার পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের পালা। এ কাজটি করে থাকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। ভ্যারিফিকেশন হয়ে গেলে ফরমে যে মোবাইল নাম্বারটি দিয়েছেন, সেটিতে একটি এসএমএস আসবে। এরপরই যে কোনোদিন আপনার কাছে থাকা রিসিটটি নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে চলে যান। তুলে নিন আপনার নিজের পাসপোর্টটি!
ভুল সংশোধন, তথ্য সংযোজন
সাধের পাসপোর্ট হাতে পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে বাড়ি ফিরে দেখলেন আপনার নামের বানানটাই ভুল; বা ভুল হয়ে গেছে মাতা-পিতার নাম! এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল ভুলের প্রকৃতি অনুযায়ী পাসপোর্ট অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করা এবং সেটি পূরণ করে জমা দেয়া। সেই ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হবে প্রামাণ্য কাগজপত্রও।
নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে। অথবা প্রয়োজন হবে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার এফিডেভিট বা পত্রিকায় দেয়া বিজ্ঞাপনের কপি। বয়স বা জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমানের সনদের সত্যায়িত কপি বা জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি প্রয়োজন হবে।
এভাবে অন্য যে কোনো তথ্য সংশোধন বা সংযোজনের জন্য প্রামাণ্য কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য সাত থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। তবে জরুরি প্রয়োজনে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেও পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
পাসপোর্ট হারালে
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে দ্রুততম সময়ে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। এর পর সাধারণ ডায়েরির মূলকপি এবং সঙ্গে গ্রাহকের এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ও এক কপি স্ট্যাম্প সাইজের ছবিসহ আবেদন করতে হবে। আবেদন ফরম মিলবে পাসপোর্ট অফিসে। সম্ভব হলে মূল পাসপোর্টের ফটোকপিও যুক্ত করুন। এর পর পাসপোর্টধারীর পুরনো রেকর্ড ও অনুকূল পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়া গেলে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। জরুরি ভিত্তিতে নতুন পাসপোর্ট পেতে খরচ করতে হবে তিন হাজার টাকা। পাওয়া যাবে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। আর সাধারণ ভিত্তিতে নতুন পাসপোর্টের ফি লাগবে দুই হাজার টাকা। পাসপোর্ট পাওয়া যাবে সাত দিনের মধ্যেই।
সুতরাং দেরি না করে তৈরি করে নিন নিজের পাসপোর্টটি। যাতে জরুরি সময়ে পাসপোর্ট তৈরির দৌড়ে নেমে কোনো ক্ষতি হয়ে না যায়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন