BanglaData.Blogspot.Com

BanglaData.Blogspot.Com

বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

মুসাফিরের নামাজ

নামাজ-মুসাফিরের নামাজ

আল্লাহ তাআলা বলেন:
 ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺑِﻜُﻢُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَ ﻭَﻻَ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺑِﻜُﻢُ ﺍﻟْﻌُﺴْﺮَ 
অর্থ: “আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না।” (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫)
ইসলাম একটি সহজ ধর্ম। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পন করেন না এবং এমন কোন আদেশ তার উপর চাপিয়ে দেন না, যা পালনে সে অক্ষম। তাই সফরে কষ্টের আশংকা থাকায় আল্লাহ সফর অবস্থায় দুটো কাজ সহজ করে দিয়েছেন।

এক: নামাজ কসর করে পড়া। অর্থাৎ চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দু’রাকাত করে পড়া। অতএব, আপনি সফরকালে যোহর, আসর এবং এশার নামাজ চার রাকাতের পরিবর্তে দু’রাকাত পড়বেন। তবে মাগরিব ও ফজর আসল অবস্থায় বাকি থাকবে। এ দুটো কসর করে পড়লে চলবে না। নামাজে কসর আল্লাহর তরফ থেকে রুখসত তথা সহজিকরণ। আর আল্লাহ যা সহজ করে দেন তা মেনে নেয়া ও সে অনুযায়ী আমল করা আল্লাহর কাছে পছন্দের বিষয়। যেরূপভাবে তিনি পছন্দ করেন আযীমত (আবশ্যিক বিধান) যথার্থরূপে বাস্তবায়িত হওয়া।
পায়ে হেঁটে, জীব-জন্তুর পিঠে চড়ে, ট্রেনে, নৌযানে, প্লেনে এবং মোটর গাড়িতে সফর করার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। সফরের মাধ্যম যাই হোক না-কেন, নামাজ কসর করে পড়ার ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব নেই। অর্থাৎ শরীয়তের পরিভাষায় যাকে সফর বলা হয় এমন সকল সফরেই চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজ কসর করে পড়ার বিধান রয়েছে।
দুই: দুই নামায একত্র করে আদায় করা
মুসাফিরের জন্য দুই ওয়াক্তের নামাজ এক ওয়াক্তে জমা করা বৈধ। অতএব, মুসাফির যোহর ও আসর একত্র করে অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশা একত্র করে পড়তে পারবে। অর্থাৎ দুই নামাজের সময় হবে এক এবং ঐ একই সময়ে দুই ওয়াক্তের নামাজ আলাদা আলাদাভাবে আদায় করার অবকাশ রয়েছে। যোহরের নামাজ পড়ার পর বিলম্ব না করে আসরের নামাজ পড়বে। অথবা মাগরিবের নামাজ পড়ার পরেই সাথে সাথে এশার নামাজ পড়বে। যোহর-আসর অথবা মাগরিব-এশা ছাড়া অন্য নামাজ একত্রে আদায় করা বৈধ নয়। যেমন ফজর, যোহর অথবা আসর মাগরিবকে জমা করা বৈধ নয়।
মাসনূন যিকরসমূহ
নামাযের পর তিন বার ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি), পড়া সুন্নাত। তারপর এই দোয়া পড়বে:
” ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﻭﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﺗَﺒَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻳَﺎ ﺫَﺍ ﺍﻟﺠِﻼﻝِ ﻭَﺍﻹِﻛْﺮَﺍﻡِ، ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳﻚَ ﻟَﻪُ، ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﻭَﻟَﻪُ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ، ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻻَ ﻣَﺎﻧِﻊَ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻋْﻄَﻴْﺖَ، ﻭَﻻَ ﻣُﻌْﻄِﻲَ ﻟِﻤَﺎ ﻣَﻨَﻌْﺖَ، ﻭَﻻَ ﻳَﻨْﻔَﻊُ ﺫَﺍ ﺍﻟْﺠَﺪِّ ﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟﺠَﺪُّ “
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আনতাস্সালামু ওয়া মিনকাস্ সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল্জালালি ওয়াল ইকরাম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানিয়া’ লিমা আ’তাইতা, ওয়া লা মু’তিয়া লিমা মানা’তা, লা ইয়ানফাউ যালজাদ্দি মিনকালজাদ্দু”।
অর্থ, হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়, আপনার কাছ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময় হে প্রতাপশালী সম্মানের অধিকারী! আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁরই বিশাল রাজ্য এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। আর তিনিই সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা দান করতে চান তা কেউ রোধ করতে পারে না। আপনার শাস্তি হতে কোন ধনীকে তার ধন রক্ষা করতে পারে না”।
তারপর ৩৩ বার করে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা, প্রশংসা বর্ণনা এবং তাকবীর পড়বে। অর্থাৎ ৩৩ বার ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার ﺍَﻟﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ (আলহামদুলিল্লাহ) এবং ৩৩ বার ﺍَﻟﻠﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮْ (আল্লাহু আকবার) পড়বে। সবগুলো মিলে ৯৯ বার হবে অতঃপর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবে,
” ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳﻚَ ﻟَﻪُ، ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﻭَﻟَﻪُ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ “
উচ্চারণ: “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর”।
অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁর বিশাল রাজ্য এবং সমস্ত প্রশংসা। আর তিনিই যাবতীয় বস্তুর উপর শক্তিমান”।
তারপর “আয়াতুল্ কুরসী”,  ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ  “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ”,  ﻗُﻞْ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﺮَﺏِّ ﺍﻟْﻔَﻠَﻖِ  “কুল আউযুবি রব্বিল ফালাক”,  ﻗُﻞْ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﺮَﺏِّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ  “কুল আউযুবি রব্বিন নাস” পড়বে।
কুলহু আল্লাহু আহাদ, ফালাক, নাস এই তিনটি সূরা ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর তিন বার করে পড়া মুস্তাহাব। উপরে উল্লেখিত জিকির ছাড়া ফজর ও মাগরিবের পর এই দু’আ দশ বার পড়া মুস্তাহাব।
ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳﻚَ ﻟَﻪُ، ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﻭَﻟَﻪُ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻳُﺤْﻲِ ﻭَ ﻳُﻤِﻴْﺖُ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ
উচ্চারণ: “ লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর”।
অর্থাৎঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁরই রাজত্ব এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর তিনিই সকল বস্তুর উপর শক্তিমান”।
এ সমস্ত যিকর ফরয নয়, সুন্নাত।
সুন্নত নামাজ সফর ছাড়া বাড়ীতে অবস্থান কালে বারো রাকআত সুন্নাত নামাজ নিয়মিত আদায় করা সকল মুসলিম নর নারীর জন্য অবশ্যই পালণীয়। আর তা হল যোহরের পূর্বে চার রাকাত ও পরে দু’রাকাত। মাগরিবের পরে দু’রাকাত। এশার পর দু’ রাকাত ও ফজরের আগে দু’রাকাত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর অবস্থায় যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নত ছেড়ে দিতেন। তবে ফজরের সুন্নত ও বিতরের নামাজ সফর অবস্থায়ও নিয়মিত আদায় করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
ইরশাদ হয়েছে:
 ﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃُﺳْﻮَﺓٌ ﺣَﺴَﻨَﺔٌ 
অর্থ: “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদশ।” (সূরা আল আহযাব, আয়াত :২১)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻛَﻤﺎ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻧﻲ ﺃُﺻَﻠِّﻲ
অর্থ: “তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখেছ ঠিক সেভাবে নামাজ পড়”। (বুখারী)
আল্লাহই তাওফিক দাতা।
ﻭﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﻋﻠﻰ ﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ .
আমীন

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন